রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:১৪ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :: সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার
গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে প্রাণঘাতী সেই সহিংসতার ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করারও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
এছাড়া সহিংসতার মধ্যে পুলিশ ও রাজনৈতিক কর্মী হত্যা এবং বাস ও হাসপাতাল পোড়ানোকে অগ্রহণযোগ্য বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
এছাড়া বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সমর্থন ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩০ অক্টোবর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিরোধীদের মহাসমাবেশে হামলা এবং সহিংসতা সম্পর্কে আমরা গত সপ্তাহান্তে আপনার বক্তব্য দেখেছি। এই সহিংসতা মূলত পুলিশ দিয়ে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই সংঘটিত হয়। আর এরপর থেকে পুলিশ প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিবসহ শতাধিক বিরোধী রাজনীতিক, বিরোধী দলের নেতাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় যে রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে আমরা তার নিন্দা জানাই। একজন পুলিশ সদস্য, একজন রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যার ঘটনা এবং হাসপাতাল ও বাসে আগুন দেওয়া অগ্রহণযোগ্য। সাংবাদিকসহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতাও অগ্রহণযোগ্য। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করতে এবং সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে আমরা কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সকলের। ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম; সকলের এই দায়িত্ব রয়েছে।
পরে ওই সাংবাদিক ঢাকায় মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর সরকারের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, সরকারপন্থি গণমাধ্যম ও তাদের সমর্থকরা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে বৈঠকের জন্য ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছে। এই প্রতিবেদনগুলোতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, সরকার মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে। আপনারা কি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার অনুমতি দিচ্ছেন?
জবাবে মিলার বলেন, আমি শুধু বলব, কূটনীতিকরা বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে কথা বলে থাকেন। এর মধ্যে সুশীল সমাজ ও সংস্থা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষাবিদসহ অন্যান্য অনেক ধরনের সংস্থা এবং ব্যক্তিও আছেন। কূটনীতিকরা তাদের দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসাবেই এটি করেন এবং আমরা সেটি চালিয়ে যাবো।
পরে জ্যাকব মিল্টন নামে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত সশস্ত্র ক্যাডাররা পেট্রোল বোমা ও গানপাউডার ব্যবহার করে নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে। এসময় সরকারি সম্পত্তির পাশাপাশি জনগণের সম্পত্তিও ধ্বংস করে। সেই ক্ষমতাসীন দল বলছে, বিরোধী দলের কর্মীরা ওই হামলা করেছে। তারা গত ১৪ বছর ধরেই এটি করছে। আমি মনে করি আন্তর্জাতিকভাবে সবাই স্বীকার করেছে, এ সমস্ত হামলা – সেটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলুন বা যেটাই বলুন – ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডার ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ কিছু মানুষ করছে। আর তাই আমেরিকার কি তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার কোনও পরিকল্পনা আছে?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি মনে করি- বাংলাদেশ সম্পর্কিত পূর্ববর্তী প্রশ্নের উত্তরে আমি যা বলেছি তা এখানেও প্রযোজ্য। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজন হলে আমরা পদক্ষেপ নেব এবং আমি কখনোই সেগুলো নিয়ে আগে থেকে এখানে কথা বলব না।